অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই

ডেস্ক রিপোর্টঃ

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে তিনি মারা যান।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম ও অভিনেতা রওনক হাসান তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে অচেতন অবস্থায় তাজিনকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর বলে শুরুতেই নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এরপর ইলেকট্রিক শক ও ইসিজি রিপোর্ট দেখার পর বেলা ৪টা ২০ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূর হোসেন তাকেকে মৃত ঘোষণা করেন। তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডা. হাসিব।

মঙ্গলবার দুপুরে হার্ট অ্যাটাক করলে দ্রুত তাকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম জানান, ‘তাজিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন তিনি। অভিনয় শিল্পী সংঘ সব সময় তার পাশে ছিল। এতো কিছুর পরও তিনি চলে গেলেন।’

অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, ‘আমরা খবরটি বেলা ৩টা ২০ মিনিটে পেয়েছি। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না।’

তবে, পরিচালক সকাল আহমেদের বরাতে জানা যায়, ‘তাজিন আহমেদ সম্ভবত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উত্তরায় নিজ বাসায় হার্ট অ্যাটাক করেন। মাঝে আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। শেষে রিজেন্ট হাসপাতালে আনা হয়।’

এদিকে, তাজিন আহমেদের এই খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান অভিনেতা রিয়াজ, রওনক হাসান, নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ, আহসান হাবিব নাসিম, হুমায়রা হিমু, সকাল আহমেদ, অভিনেত্রী জেনীসহ অনেকেই। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মরদেহ সমাহিত করার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পরিবার থেকে নেওয়া হয়নি।

ছেলেবেলা থেকেই চারকোণা বাক্সে নিজের অভিনয় দেখার দারুণ ইচ্ছে ছিল তাজিন আহমেদের। মায়ের হাত ধরেই অভিনয় জগতে পথচলা শুরু। তিনি শুধু অভিনয় দিয়ে নয়, সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা, নাটক লেখা এবং পরিচালনা করেও প্রশংসিত হয়েছেন। মাঝে বেশ লম্বা সময় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। তবে শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয়ে নিয়মিত ছিলেন। উপস্থাপনা বেশ উপভোগ করতেন তাজিন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘চেতনা’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার উপস্থাপনার শুরু। পরবর্তীতে এনটিভিতে টিফিনের ফাঁকে, এছাড়া অন্যান্য অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করেছেন। রেডিওতেও উপস্থাপনা করেছেন। সদা হাস্যময়ী এই অভিনেত্রী ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনো ভাবেননি। তিনি সব সময় বর্তমান সময়কে প্রাধান্য দিতেন।

তাজিন আহমেদের জন্ম ঢাকার লালবাগে তার নানুবাড়িতে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। বাবা কামাল আহমেদ এবং মা দিলারা জলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মা দিলারা জলির প্রোডাকশন হাউজ ছিল। ‘নাট্যজন’ নাটকদলের হয়ে মঞ্চে কাজ করেছেন। ২০০০ সালে ‘আরণ্যক’ নাট্যদলে যোগ দেন। শেষদিন পর্যন্ত তিনি ‘আরণ্যক’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টিভি নাটকে অভিনয় করে পরবর্তীতে দর্শকের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন। রেডিও এবং টেলিভিশনেও উপস্থপনা করেছেন তাজিন। লেখালেখিতেও বেশ পারদর্শী তিনি। তাজিনের লেখা ও পরিচালনায় তৈরি হয় ‘যাতক’ ও ‘যোগফল’ এই দুটি নাটক। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’, ‘অনুর একদিন’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘হুম’, ‘সম্পর্ক’ ইত্যাদি।

 

Comments

comments

%d bloggers like this: