ফোন উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ
প্রথমবারের মতো মোবাইলফোন উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ। আজ দেশে প্রথম মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু করেছে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।
বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের এই মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজন কারখানার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর আলম সরকার, ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদ হাসান, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর এসএম রেজওয়ান আলম ও উদয় হাকিম, অপারেটিভ ডিরেক্টর লিয়াকত আলী, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর ফিরোজ আলম প্রমুখ।
তারানা হালিম বলেন, ‘দেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, আনন্দের দিন, গৌরবের দিন। এই কারখানা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশেই মোবাইল ফোন উৎপাদন হবে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণের সাথী হলো ওয়ালটন। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোন উৎপাদনকারি দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ।’ এজন্য তিনি ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চ মানসম্পন্ন হ্যান্ডসেট তৈরির জন্য ওয়ালটন বদ্ধপরিকর। মানসম্পন্ন হ্যান্ডসেট তৈরির ক্ষেত্রে বিটিআরসির যেসকল মানদণ্ড রয়েছে তা পূরণ করেই স্মার্টফোন কারখানা স্থাপন করেছে ওয়ালটন। তারা প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত। সে কারণেই তারা মোবাইল ফোন তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব তাদের অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করা।’ যার যার অবস্থান থেকে ওয়ালটনকে সহযোগিতা করার আহ্বাবান জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন-বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় প্রতিযোগী সক্ষমতায় এগিয়ে থাকবে দেশে তৈরি ওয়ালটন স্মার্টফোন।
দেশে তৈরি উচ্চমানের মোবাইল হ্যান্ডসেট সাশ্রয়ী মূল্যে এবং কিস্তিতে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশে ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতো হতো। প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ খাতে দেশীয় শিল্পের বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল। ওয়ালটন স্মার্টফোন কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলো।’ তিনি আশা করেন- দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও যাবে বাংলাদেশে তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট।
প্রতিমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেলযুক্ত হ্যান্ডসেট তৈরির দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো। সেইসঙ্গে মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ।
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাথমিকভাবে এই কারখানায় উৎপাদন হবে বার্ষিক ২৫ থেকে ৩০ লাখ ইউনিট হ্যান্ডসেট। এজন্য প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এখানে রয়েছে হ্যান্ডসেটের ডিজাইন ডেভেলপ, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ, মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও টেস্টিং ল্যাব। স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বের লেটেস্ট জাপান ও জার্মান প্রযুক্তির মেশিনারিজ। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় এক হাজার লোকের।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি প্রোডাকশন লাইন। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ১০টি প্রোডাকশন লাইন স্থাপনের কাজ। পিসিবির (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) ওপর অতি নিখুঁতভাবে সূক্ষ্ম পিন বসিয়ে উচ্চ গুণগতমানের পিসিবিএ বা মাদারবোর্ড তৈরির লক্ষ্যে কারখানায় স্থাপন করা হয়েছে সার্ফেস মাউন্টিং টেকনোলজি (এসএমটি ) সিস্টেম। গড়ে তোলা হয়েছে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত মজুদ।
প্রাথমিক পর্যায়ে ছয়টি মডেলের স্মার্টফোন অ্যাসেম্বলিংয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হচ্ছে। আগামী বছর থেকে পূর্ণাঙ্গ হ্যান্ডসেট উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। হ্যান্ডসেটের বডি, চার্জার, ইয়ার ফোন, ব্যাটারি, ইউএসবি ক্যাবলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হবে। কারখানায় মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে, মাল্টি-লেয়্যার মাদারবোর্ড তৈরির প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী পণ্য উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগ এবং টেস্টিং ল্যাব। রয়েছে শক্তিশালী মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগ, যেখানে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের উচ্চ গুণগতমান কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম জানিয়েছিলেন, কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা তাদের অনেক দিনের। বাজার গবেষণা, প্রস্তুতি আগেই করা হয়েছে। যন্ত্রপাতি আমদানিসহ প্রকৌশলগত কার্যক্রমও পরিকল্পনা অনুয়ায়ী সম্পন্ন হচ্ছে। শুরুতে মাসে প্রায় ৫ লাখ হ্যান্ডসেট উৎপাদনের কথাও জানান তিনি।এছাড়াও ওয়ালটন প্রথমেই তাদের ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের কারখানা স্থাপনে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। তবে এই কারখানায় ধারাবাহিক বিনিয়োগের জন্য আরও তহবিল গুছিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি।