চৌদ্দগ্রামের করপাটি স্কুলে দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার অপচেষ্টায় প্রধান শিক্ষক!

দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি এলাকাবাসীর

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি হাজী মনির উদ্দীন আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়ম বহিভর্তূভাবে লাইব্রেরিয়ান ও নৈশ প্রহরী নিয়োগের প্রতিবাদ করায় ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার অপচেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে। এনিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারী কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে লাইব্রেরিয়ান ও নৈশ প্রহরী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ্ আলম। বিষয়টি জানতে পেরে গত রবিবার সকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অবৈধ পন্থায় লাইব্রেরিয়ান ও নৈশ প্রহরী নিয়োগের কারণ জানতে চাওয়া ও প্রতিবাদ করায় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য কাজী মহি উদ্দীন মুকুলকে অপমান করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। ঘটনার পরদিন মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে দিয়ে মুকুলের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধনও করান চতুর ওই প্রধান শিক্ষক। মানববন্ধনে হাতে লেখা প্লে-কার্ডগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী মহি উদ্দীন মুকুলকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও প্রধান শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার দাবি করা হয়। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বলে জানা যায়। স্থানীয়দের ধারণা, বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অবৈধ পন্থায় লাইব্রেরিয়ান এবং নৈশ প্রহরী নিয়োগের প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক মুকুলকে অপমান করা এবং নিজের অপরাধকে ঢাকার অপচেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী মহি উদ্দীন মুকুল জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি বলে আমাকে হেনস্থা করতে প্রধান শিক্ষক এমন একটি ঘৃণিত কাজের আশ্রয় নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি বিদ্যাললেয় কোমলমতি ছাত্রীদেরকে ব্যবহার করেছেন। ইতিপূর্বে তার দুর্নীতির খবর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়েছে। সে বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা তসরুপ করেছিল। যার প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আজ আমাকে সন্ত্রাসী সাজানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার মানুষ জানে কে সত্যের পথে আর কে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদেরকে সঠিক তদন্ত করে জাতির কাছে মূল ঘটনাটি প্রকাশ করার অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে চার বছরে তিন লক্ষাধিক টাকা তসরুফ করার খবর স্থানীয় পত্রিকাসহ দেশের বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় অভিযোগের তীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.শাহ্ আলম এর দিকেই উঠেছিল। জানা যায়, গত বছর ম্যানেজিং কমিটির এক জরুরী সভায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যালয়ের একটি আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন। যাতে তিন লক্ষাধিক টাকার কোনো হিসাব দেখাতে পারেননি তিনি। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.শাহ্ আলম অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গুলো উত্তোলন করে ব্যক্তিগত কাজে লাগিয়েছেন। বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে এই টাকা গুলো কোথায় গেছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে তিনি টাকা গুলো বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা রাখার আশ্বাস দিলে ম্যানেজিং কমিটির ঐ সভাটি স্থগিত রেখে পরবর্তী সভায় হিসাব-নিকাশ পূণরায় দেখার কথা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে গরমিল হওয়া টাকা গুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেননি তিনি। প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মোট আয় দেখানো হয়েছে চৌদ্দ লক্ষ তের হাজার পাঁচশত ঊনষাট টাকা, মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে দশ লক্ষ চুরাশি হাজার বিশ টাকা। যাতে তিন লক্ষ ঊনত্রিশ হাজার পাঁচশত ঊনচল্লিশ টাকা ক্যাশ থাকার কথা। হিসাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিরাশি হাজার নয়শত আট টাকা জমা দেখানো হয়েছে। কিন্তু তদন্ত করে দেখা যায় বিদ্যালয় অ্যাকাউন্টে নুন্যতম পরিমাণের টাকা ছাড়া কোনো টাকা জমা নেই। ম্যানেজিং কমিটির সভার প্রতিবেদনেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা তসরুপের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের অভিযোগে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের কোনো রেজিষ্ট্রার পাওয়া যায়নি, আয়-ব্যয়ের সঠিক ভাউচারও পাওয়া যায়নি, যা পাওয়া গেছে তা ব্যবহারেও সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি এবং অধিকাংশ ভাউচার খরচের সময়ের পরবর্তী তারিখে দেখানো হয়েছে। কখনো কখনো আবার একই ভাউচার একাধিকবার দেখানো হয়েছে হিসাবে। শিক্ষকদের বেসরকারী বেতন-ভাতাদিও বাকি রেখে হিসেবে খরচ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ওই প্রতিবেদনে নানা অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক মো.শাহ আলম এর বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে গতকাল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘আমাকে অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা কাজী মহিউদ্দিন মুকুল নামের এক সদস্যদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে’।

 

Comments

comments

%d bloggers like this: