শিক্ষক নিয়োগে ক্ষমতা হারাচ্ছে ম্যানেজিং কমিটি
বর্তমানে শুধু সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক এবং মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভি নিয়োগ কার্যক্রম এনটিআরসিএ করলেও এখন থেকে কর্মচারী, অধ্যক্ষ ও উপাধক্ষ্যের নিয়োগ কার্যক্রমও এনটিআরসিএর নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে ম্যানেজিং কমিটির হাত থেকে সকল নিয়োগ কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে খর্ব করতে হবে। আর এই নিয়োগের সব কার্যক্রম এনটিআরসিএর হাতে দিতে বিদ্যমান আইন সংশোধনেরও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।উল্লেখ্য, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় এমন অভিযোগের পর ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির হাত থেকে এই নিয়োগ কার্যক্রম ২০০৫ সালে কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) আদলে গঠন করা হয় এনটিআরসিএ। তারপর থেকেই সর্বশেষ ১৫টি নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করেছে এনটিআরসিএ। এত দিন শুধু অধ্যক্ষ, উপাধক্ষ্য এবং কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিটির হাতে ছিল। এখন সেটাও এনটিআরসিএর দায়িত্বে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আর তা বাস্তবায়ন করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে এসেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শিক্ষক নিয়োগের এই কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে এনটিআরসিএর হাতে দেওয়ার জন্য একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তবে আগে বিদ্যমান আইনের সংশোধনী আনতে হবে।’ এ নিয়ে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।তিনি আরও বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফলে মান নিশ্চিতের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মান নিশ্চিত করার সম্ভব হবে না।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি কর্র্তৃত্ব নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মান ও যোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই এই কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে এনটিআরসিএর হাতে দেওয়া হলে কমিটি কর্র্তৃত্ব নিয়োগ-বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে।এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হবে স্কুল ও কলেজগুলোকে। এসব নির্দেশনা অনুসরণ না করা হলে অভিযুক্তদের এবং প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাতিল এবং শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ স্থগিত বা একেবারেই স্থগিত করা হতে পারে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ গঠন করে নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে প্রিলিমিনারি টেস্ট এবং সেখান থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা দ্বিতীয় ধাপে অনলাইনে পূরণ করা আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শূন্য পদের তালিকা তৈরি করে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।