চালের বাজার মনিটরিং এ নেমেছে জেলা প্রশাসন

কুমিল্লা চালের বাজারে অস্থিরতা যেন বাড়ছেই। অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বৃদ্ধিতে কুমিল্লার খেটে খাওয়া ও সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যে জীবনযাত্রা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চাল ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেটসহ নানা অজুহাতে দিন দিন বেড়েই চলছে চালের দাম। এই অস্থির চালের বাজারকে সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনতে বাজার মনিটরিং করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নগরীর রাজগঞ্জ বাজার ও রাণীর বাজারের ৭টি চালের আড়ত এবং বিসিক শিল্প এলাকায় একটি চাল কারখানায় কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং করা হয়। মনিটরিং করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রাজগঞ্জ বাজারের ভীনা ভানি, মায়ের দোয়া। রাণীর বাজারের মেসার্স মহাদেশ ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ফুডস, মেসার্স দয়াল ট্রেডার্স, মেসার্স মাহাবুব এন্টারপ্রাইজ, মক্কা এন্টারপ্রাইজ এবং বিসিকে চাল কারখানা এস আলম অটোমেটিক রাইস মিলস। বাজার মনিটরিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির সালেহ ইমন, কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফারুক হোসেন, কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি আবু ছালাম মিয়াসহ অন্যরা।

মনিটরিং চলাকালে চালের বাজার অস্থির কেন? জানতে চাইলে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার  জনতার বর্তাকে বলেন, ‘আমরা বাজারে চালের দোকানে গিয়েছি। খুচরা, পাইকারি ও চাল আড়তদারদের কাছে গিয়েছি এবং কথা বলেছি। সর্বশেষ বিসিকে চাল উৎপাদন করে একটি কারখানায় গিয়েছি। বেশিরভাগ জায়গাতে আমরা চালের বাজার দরকে তুলনা ও পর্যালোচনা করলাম। আমাদের যেটা দৃষ্টিগোচর হয়েছে সেটা নিয়ে কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। কারখানায় চালের যে উৎপাদন খরচ ৫০ কেজি বস্তায় ২৩ শ টাকায় তারা বাজারে চাল বিক্রি করছে। পাইকারি দোকানে এই চালাটাই তারা ২৫-২৭শ টাকায় বিক্রয় করছে। বাজারে খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সেই চাল কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রয় করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনও কারণ আসলে আমরা খুঁজে পাইনি। আমরা খুচরা দোকানিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে চালের পাইকারি ও আমদানি কারকদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। কিন্তু আমরা বাজারের পাইকারি ও আড়তের চালের স্টলগুলো ঘুরে দেখেছি। অনেকগুলো স্টল বন্ধ দেখা গেছে। আমরা জানিয়ে দিয়ে এসেছি। আজ সোমবারের মধ্যে তাদের রেজিস্ট্রার হালনাগাদ করে আমাদের কাছে জমা দিতে। এবং চালের বাজার ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায় রাখার জন্য তাদের যে সঠিক আয় সেটা হিসাব করে চালের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি খুব তাড়াতাড়ি কুমিল্লার চালের বাজারে একটি সহনীয় পর্যায় চলে আসবে। এরপরও আমার বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। যদি তারা নিয়ম কাননগুলো মেনে না চলে সেই ক্ষেত্রে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’

তবে চালের আড়ত মেসার্স মহাদেশ ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ফুডসের মালিক নারায়ন দত্ত বলেন, জেলা প্রশাসনের মনিটরিং কমিটি আমার দোকানের কেনা-বেচা মনিটরিং করেছে। চালের স্টলগুলো ঘুরে দেখেছে। কোথাও কোনও সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেননি। আমরা চাল উত্তর অঞ্চল থেকে আমদানি করতে হয়। ব্যয় অনেক পড়াতে বাধ্য হয়ে বেশি দরে চাল বিক্রি করতে হয়।

অন্যদিকে চাল কারখানা এস আলম অটোমেটিক রাইস মিলসের মালিক শাহ আলম পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘কুমিল্লার চালের আড়ত ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা উত্তর অঞ্চল থেকে চাল আমদানি করে যে ব্যয় দেখায়, আমাদের কাছ থেকে চাল নিয়ে সেই একই ব্যয় দেখায়। এটা তাদের কারসাজি।’

 

Comments

comments

%d bloggers like this: