কুমিল্লায় আবাসিক হোটেলে অভিযান; আটক- ১০
শুক্রবার কোতয়ালী মডেল থানাধীন আবাসিক হোটেল নিল পদ্মা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। এসময় আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ করার সময় অাশিক (২৭), দয়াল হাসান (২৫), স্বনালি (২৫), জোলেখা (২৫), রুবি (২৭), জোসনা (২৫), বিথি (২৭), রুমা (৩৫), পারভীন (২৫), দোলা (৩৫) কে কোতয়ালী থানা পুলিশ অাটক করেন।
এর আগে গত ৫ জুলাই কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন আবাসিক আমতলী এলাকায় হোটেল ‘অভি’তে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান করে পতিতা সহ ৪ জনকে আটক করে ৬ মাস করে জেল প্রদান করা হয়েছে। এ সময় হোটেল অভিতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করা হয়।
ওই দিন দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: ফজলে এলাহী এ অভিযান পরিচালনা করেন। জেলা প্রসাশক আবুল ফজল মীর এর নির্দেশনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা সেনানিবাস সংলঘ্ন আবাসিক হোটেল ‘অভি’তে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অপরাধে একজন ছেলে ও একজন মেয়েকে আটক করে হয়।
তাদের উভয়কে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করা হয়। এ সময় পতিতা ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে হোটেল অভি সিলগালা করা হয়। এছাড়া হোটেলের ম্যানেজার ও এক কর্মচারিকে আটক করা হয়।
তাদের ২জন কে একই মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন জাবত ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন এলাকার হোটেল অভি অবৈধ পতিতা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো।
এদিকে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এর আগে যৌনকর্মী দিয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের আমতলি ও ঝাগুরঝুলি এলাকার কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেলের ২য় তলায় হোটেল নীলপদ্ম আবাসিক হোটেল ও অভি আবাসিক হোটেলে রমরমা দেহ ব্যবসা আর অনৈতিক কর্মকান্ডের আসরের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
এসব হোটেল দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ-অসামাজিক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুরুষদের আগমন ঘটত। সরোজমিন গিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা শহরের অনেক অভিজাত এলাকার বাসাবাড়িতেও গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। এসব হোটেলগুলোতে ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
হোটেলের পক্ষ থেকে বোর্ডারদের কাছে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় এসব অনৈতিক ব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অভিযোগ ছিল, পুলিশকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ ও তাদের অনৈতিক কাজের সুযোগ দিয়ে মাদক ও নারী ব্যবসা চলছে।
এ অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে এলাকার যুব সমাজ। তবে ওই এলাকায় বসবাসকারী সাধারন মানুষ পরিবার পরিজন ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে রয়েছে ভোগান্তির মধ্যে। এ পরিবেশে অনেক কষ্ট করেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে ৫/৭টি আবাসিক হোটেল মাদক ও নারী দেহ ব্যবসা চলে। এসব হোটেলের ম্যানেজার বা কর্মচারীদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী এবং ওইসব দেহ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্যের কারণে এসব হোটেলে অভিযান চলে না। হোটেলের লোকজন খদ্দেরদের নারী ও মাদক এনে দেয়।
সেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক ও বোরখা পরে নারীরা আসে। অভিজাত পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরাও হোটেলে সময় কাটায়। খদ্দের অনুসারে প্রতি ঘণ্টা রুম ভাড়া নেয়া হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। আবার সারারাত কাটালে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়।
এসব হোটেলগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। অভিযোগ আছে, তারা এসে হোটেল থেকে বকশিস নিয়ে যায়। কখনও কখনও তারা বাইরে থেকে নারী নিয়ে আসে। তারা রুম ভাড়া দেয় না। অনেক হোটেলের রুম মাদক সেবন ও জুয়ার জন্যও ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। হোটেলের লোকজন মাদকসেবীদের চাহিদা অনুসারে ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য এনে দেয়।
কোনো কোনো হোটেলে অস্ত্র ব্যবসা হয় এমন নজিরও রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আমতুলি ও ঝাগুরঝুলি এলাকার কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেলের ২য় তলায় নীলপদ্ম ও অভি হোটেল আবাসিকে এমনটাই চলছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে মহাসড়কের পাশে একই বিল্ডিং এর ২য় তলায় একপাশে যাত্রীদের নামাজের ঘর অন্য পাশে রমরমা দেহ ব্যবসা আর অনৈতিক কর্মকান্ডের আসর চলে।
আমতলী ও ঝাগুরঝুলি থেকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত ৫/৭টি আবাসিক হোটেলগুলো দিনের পর দিন অনৈতিক দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে অনৈতিক বাণিজ্য করলেও দেখার নেই কেউ।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় কতিপয় পুলিশ সদস্যের সাথে রয়েছে তাদের সখ্যতা, তা ছাড়া এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকও জড়িত রয়েছে যার কারনে আমরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ দিতে পারি না। এই সব এলাকায় জমজমাট দেহ ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেছে সাধারন মানুষ।