আমেরিকার বিজ্ঞানী বাঙ্গালী ড. আমিনুল ইসলাম, আলোকিত নিজ দেশেও

ওমর ফারুক হৃদয়, কুমিল্লা: বাঙ্গালী বিজ্ঞানী হিসেবে ড. আমিনুল ইসলাম উত্তর আমেরিকায় একজন অতি পরিচিত ব্যাক্তিত্ব। শুধু পরিচিত নন, বিজ্ঞ, বিনয়ী একজন নির্ভরযোগ্য এবং প্রিয় মানুষ তিনি। তবে লেস্কল ও ড. আমিনুল ইসলামের মধ্যকার বৈজ্ঞানিক সম্পর্কটা সম্মন্ধে আমরা ততটা অবহিত নই। লেস্কলেরে মত গুরত্বপূর্ণ অতি প্রয়োজনীয় এবং প্রায়স ব্যবহৃত ঔষধটি আবিষ্কারের পিছনে যে গুটি কয়েক বিজ্ঞানীর গবেষনাগত অবদান রয়েছে তাদের অন্যতম ড. আমিনুল ইসলাম। বালাদেশ সোসাইটি অব নিউজার্সির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফোবানার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে উত্তর আমেরিকার প্রায় সাবাই তাঁকে চিনেন এবং জানেন। ড. ইসলামের পেশাগত যোগ্যতা, অর্জন ও মননশীলতার পরিধি, সমাজ, মানবতা এবং সংবেদনশীল কর্মকান্ডের জগৎ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

১৯৫৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়নশাস্ত্রের গ্রাজুয়েট ড. আমিনুল ইসলাম কলম্বো প্ল্যান স্কলারশীপ লাভ করে ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (১৯৬৯-১৯৭৩) সালে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে বি.সি.এস.আই.আর ল্যাবে গবেষক, সিনিয়র বিজ্ঞান কর্মমর্তা হিসাবে যোগদান করেন। তখনই ইমিগ্রেন্ট হয়ে ইউ,এস,এ সরকারের বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমায় আমেরিকায় ১৯৭৫ সালে। প্রথমে নিউওয়ার্কে। দু’সাপ্তাহ পর চলে যান উইসকনসিন ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপ পেয়ে (১৯৭৫-১৯৭৭) । চলে আসেন রাটগার্স মেডিক্যাল স্কুল, পিসক্যাটওয়ে নিউ জার্সিতে (১৯৭৭-১৯৮০)। অল্প সময়ের জন্য (১৯৮০-১৯৮১) কাজ করেন নিউইয়র্ক ইউভার্সিটি (এন,ওয়াই,ইউ) মেডিক্যাল স্কুল এবং রেভলন হেল্থ কেয়ার, টাকাহো, নিউইয়র্ক, সামিট নিউজার্সি (১৯৮১-১৯৮৩)। তিনি ১৯৮৩ তে যোগদান করেন সুইস ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানী নোভাটিসে (পূর্বতন স্যান্ডোজ) সিনিয়র সাইনটিষ্ট হিসাবে। দীর্ঘ ২০ বছর কাজের পর ৬৪ বৎসর বয়সে তিনি অবসর গ্রহর করেন। ড. আমিনুল ইসলামের প্রকাশিত গবেষণা পত্রের সংখ্যা-২৪।

ড. আমিনুল ইসলাম একজন কাজ পাগল মানুষ। আন্তহীন অবসর তার জন্য নয়। ঘরে বসে থাকা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। পেশাগত দক্ষতার কারনে কোরিয়ান মালিকাধীন এসকে বায়ো ফার্মাসিটিক্যাল কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুরোধে কোম্পানির প্রয়োজনে ড. ইসলাম কে উচু বেতনে নিয়োগ দেন। প্রায় ৪ বছর অধিক কাল ধরে অবসর কালীন সময়ে নতুন কর্মস্থলে পূর্ণ উদ্দ্যমে কাজ করেছেন তিনি। তার অভিপ্রায় কাজ করার মতো মানসিকতা থাকলে বয়স কোন বাধা নয়।

পেশায় জৈব রাসায়নবিদ ড. আমিনুল ইসলামের নেশা হচ্ছে সমাজকর্ম। ১৯৭৫ এ বৈধ অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় পদার্পনের পর থেকে তিনি বরাবরই কমিউনিটি কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। অর্থের প্রাচুর্য কিংবা শিক্ষার অহংকার তার সমাজকর্মে বাধা হয়ে দাড়ায় নি। গত ৩০ বছর ধরে তিনি নিউজার্সির এডিসনে স্বেচ্ছায় প্রনোদিত হয়ে আরো ৬ জন স্বেচ্ছাশ্রম শিক্ষক নিয়ে একটি বাংলা ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য স্কুল চালিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে আমাদের পরবর্তী বাঙালী প্রজন্মকে দেশীয় ভাষা, কৃষ্টি. সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আরবি শিক্ষা দান করে উত্তর আমেরিকায় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে দিয়ে চলেছেন।

ড. আমিনুল ইসলাম মিডেলসেক্স কাউন্টি মুসলিম সেন্টারের (পিসক্যাটাওয়ে) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্যাক্তিগত অনুদান, তহবিল সংগ্রহ, স্বেচ্ছাশ্রম, কমিউনিটির যেকোন প্রয়োজনে নিঃস্বার্থ ও সক্রিয় মানুষ তিঁনি।

ড. ইসলামের সমাজ সেবার কাজ উত্তর আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের মানুষের জন্য তিনি একই ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যে স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন (উজানচর হাই স্কুল) সেই স্কুলের গরীব মেধাবী ছাত্রদের জন্য স্থায়ী বৃত্তির ব্যাবস্থা করেন। নিজ গ্রামে ভূমিহীনদের ভূমি প্রদান, গরীব মেয়েদের বিবাহের ব্যাবস্থা, গরীব দুস্থ্যদের মাঝে রিক্সা, ভ্যান গাড়ী, জেলেদের মাছের জাল ইত্যাদি প্রদান করে যাচ্ছেন। নিজ গ্রাম কল্যান পুরে এবং বাজারে কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণে সর্বোচ্চ অনুদান প্রদান করেন। আজো এই অনুষ্ঠানে দুস্থদের মাঝে ৩০ টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।

তাঁর স্ত্রী নাজিবা ইসলাম ও একজন বিশিষ্ট প্রবাসী নারী নেত্রী, সমাজ কর্মী। একসময়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউজার্সির সভাপতি ছিলেন। পেশায় গবেষণা বিশেষজ্ঞ নাজিবা ইসলাম নিউইয়র্ক কর্ণেল মেডিক্যাল সেন্টারে দীর্ঘ কাল কাজ করেন। তার নিজের ১০টি গবেষণা প্রকাশনা রয়েছে এবং বিশ্ব বিখ্যাত মর্যাদাপূর্ণ “দি জার্ণাল অব ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেষন” এ প্রকাশিত হয়েছে। ড. ইসলাম ও নাজিবা ইসলামের বড় ছেলে সোহেল মোঃ ইসলাম কর্ণেল ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিক্যাল বিষয়ে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্লাস্টিক সার্জারীতে ফেলোসিপ করেন ভার্জিনিয়া জেনারেল মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল থেকে। তিনি প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম নিউজার্সের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনের পর নিউইয়র্কের লং আইলেন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

ড. আমিনুল ইসলামের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বানছারামপুর থানার কল্যাণপুর গ্রামে। তার বাবা আব্দুল আরিফ ছিলেন ঢাকার চরসিন্ধুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মরহুম আরিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ/বি.টি ক্লাসের সর্ব প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। বাবা মার একমাত্র সন্তান ড. আমিনুল ইসলাম মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারান। তিনি নিজের চেষ্টা ও একাগ্রতায় লেখা পড়া করে সর্বোচ্চ ডিগ্রিতে শিক্ষা প্রাপ্ত হন এবং কর্মজীবনে অচেল ঐশ্বর্য এবং অগাট প্রতিপাত্তি অর্জন করা সত্ত্বেও নিজেকে একজ বিনয়ী, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এবং সমাজ- সচেতন মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

Comments

comments

%d bloggers like this: