কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যের বাহক “ধর্ম সাগর”
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুমিল্লা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র বাদুরতলা এলাকায় অবস্থিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক ‘ধর্মসাগর’। এ সাগরের আয়তন ২৩ দশমিক ১৮ একর। এটি চারদিকে বৃক্ষশোভিত একটি মনোরম স্থান। ধর্মীয় উত্সব-বর্ষবরণ ছাড়াও বছরের প্রায় সবসময় এখানে দেখা যায় প্রকৃতি ও বিনোদনপ্রেমীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীর ঢল। তবে ইতিহাসগত কারণে এর নামকরণ ‘সাগর’ হলেও এটি সাগর নয় ‘দীঘি’। এদিকে ধর্মসাগর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে প্রাচীনতম অনেক দীঘি। এগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে বিনোদনমুখী করা গেলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো বলে মনে করেন জেলার বিশিষ্টজনেরা।ইতিহাসগ্রন্থ থেকে জানা যায়, কুমিল্লার ‘ধর্মসাগর’ দীঘির রয়েছে কয়েকশ’ বছরের ইতিহাস। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন। তাঁর নামানুসারে এ দীঘির নামকরণ করা হয় ‘ধর্মসাগর’। চারপাশে বিপুল সবুজ বৃক্ষের সমাহারে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাখ-পাখালীর কলকাকলীতে মুখর থাকে ধর্মসাগর দীঘি। তাই সারা বছর ধরেই দূর-দূরান্ত থেকে এ দীঘি দেখার জন্য আসেন পর্যটক, প্রকৃতি ও বিনোদনপ্রেমীরা। দীঘির উত্তরপাড় এলাকায় রয়েছে ৫ একরের ‘নগর পার্ক’। দীঘির উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে ‘রাণী কুটির’ এবং একটি ‘শিশু পার্ক’ ও ‘কুমিল্লা নজরুল ইন্সটিটিউট’। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে দীঘির পশ্চিম পাড়ে বিভিন্ন জাতের ফুল ও বাহারী গাছ লাগিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।ধর্মসাগর পাড়ে ধর্মীয় উত্সব (ঈদ-পূজা), বর্ষবরণ, বসন্তবরণ ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো দর্শনার্থীর ঢল নামে। বিশুদ্ধ পরিবেশে প্রতিদিন প্রেমিক-প্রেমিকা, দম্পত্তি ও রসিকজনেরা প্রাণখুলে মায়াময় স্থান এই সাগর পাড়ে সময় কাটান। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীসহ শিশুরা রাজহংস ও নৌকায় চড়ে নাচ-গানে, আনন্দ-উত্সবে মেতে ওঠেন। এছাড়া এ সাগরপাড়ে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকে নির্মল পরিবেশে শারীরিক কসরত্ করতে দেখা যায়। ধর্মসাগর দীঘিটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে এর চারপাশে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, রেস্টহাউস নির্মাণ, ভ্রমণের জন্য কয়েকটি স্পিডবোটের ব্যবস্থাকরণসহ দর্শনার্থীদের বসার সুব্যবস্থা করে সৌন্দর্যবর্ধনে বিনোদন সহায়ক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থী ও বিশিষ্টজনেরা।উল্লেখ্য, কুমিল্লায় ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অনেক ঐতিহ্যবাহী দীঘি। প্রাচীনকালের রাজা-রাণী ও তাঁদের আপনজনের স্মৃতি জিইয়ে রাখার জন্য ও মানবতার কল্যাণে দীঘি খনন করে গেছেন। জেলা শহরে ‘নানুয়ার দীঘি’, ‘উজির দীঘি’, ‘লাউয়ার দীঘি’, ‘রাণীর দীঘি’, সেনানিবাস এলাকায় ‘আনন্দ রাজার দীঘি’, ‘ভোজ রাজার দীঘি’, বরুড়ায় ‘কৃষ্ণসাগর দীঘি’, ‘কাজির দীঘি’, সদর দক্ষিণে ‘দুতিয়ার দীঘি’, চৌদ্দগ্রামে ‘জগন্নাথ দীঘি’, ‘শিবের দীঘি’ ও মনোহরগঞ্জে বিশাল আয়তনের ‘নাটেশ্বর দীঘি’ উল্লেখ করার মত।