বিশ্বকাপ জিততে হলে নেইমারকে ব্রাজিলের লাগবে

রিও ডি জেনেইরোর বাইরে ছোট্ট শহরতলি তেরেসোপলিস। ওখানেই গ্রানিয়া কোমারি ট্রেনিং ক্যাম্প। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্নটা ওড়াউড়ি করছে ওখানেই। আর সেই স্বপ্নঘুড়ির নাটাই যাঁর হাতে, সেই নেইমারও তো ১৬ সতীর্থের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সেখানে।

গেল ফেব্রুয়ারিতে ভেঙে যায় তাঁর ডান পায়ের পঞ্চম মেটাটারসাল। ৩ মার্চ অস্ত্রোপচার হয় সেখানে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন তাতে খায় বড় ধাক্কা। চিকিৎসকরা অবশ্য শুরু থেকেই বলছেন, রাশিয়ায় ঠিকই যেতে পারবেন নেইমার। পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শেষে সপ্তাহখানেক আগে মাঠে ফেরেন তিনি। এবার ওই প্রস্তুতি ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার জন্য। সেখানে এই ফরোয়ার্ডের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টাই করছেন ব্রাজিল।

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সমন্বয়ক এদু গাসপারের কথাতেই সেটি স্পষ্ট। নেইমারের সঙ্গে কোচ লিওনার্দো বাচ্চি তিতের মুখোমুখি বৈঠকের সূচি রয়েছে। সেখানে কী কথা হবে, তা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন গাসপার, ‘তিতের কাছে নেইমার শুনবে যে তিন মাস মাঠের বাইরে থাকার পরপরই আগের ওই অবিশ্বাস্য ফুটবলারকে দেখা যাবে না। তবে আমরা ওর জন্য ভালো এক আবহ তৈরি করব। যেন ওর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। এবং তা যেন ওর ভালো পারফরম করতেই হবে—এমন চাপের মধ্য দিয়ে নয়।’

তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে নেইমারকে ব্রাজিলের লাগবে। ওই জাদুকরী নেইমারকেই প্রয়োজন হবে। তাঁকে ফেরানোর জন্যই এখন পুরো ব্রাজিলের প্রচেষ্টা। এ প্রত্যাবর্তনের পথ সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের এই সমন্বয়ক, ‘প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যা করছিল, নেইমার এখানেও তা চালিয়ে যাবে। পুনর্বাসনের শারীরিক অংশ আছে; এরপর টেকনিক্যাল অংশ। তবে এসবের পাশাপাশি আবেগের অংশটাও রয়েছে। ওর তাই বুঝতে হবে আমরা কী ভাবছি। আমরা শুধু নেইমারকে নিয়ে ভাবছি না, প্রত্যেক ফুটবলারকে নিয়েই ভাবছি।

বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। ৩ জুন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে লিভারপুলে এবং ১০ জুন অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ভিয়েনায়। এর মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নেইমারকে ৪৫ মিনিট খেলানোর পরিকল্পনার কথা বলেছেন গাসপার, ‘নেইমার প্রথম ম্যাচে ৪৫ মিনিট খেলবে। আমরা সবাই মিলে ম্যাচ দুটো নিয়ে কথা বলেছি। এমনভাবে বলেছি, যেন এগুলো বিশ্বকাপের ম্যাচ।’ ম্যাচগুলোর গুরুত্বের কথা আবারও জোর দিয়ে বলেছেন তিনি, ‘আমাদের বাস্তব অবস্থাটা বুঝতে হবে। তাহলেই শুধু আমরা বিশ্বকাপে ভালো শুরু করতে পারব। আমরা ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়া দল দুটিকে ট্যাকটিক্যালি খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছি। বুঝেছি যে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য ওরা আদর্শ প্রতিপক্ষ। আমাদের কাছে এখন ক্রোয়েশিয়া-অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুটি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেই প্রথম ম্যাচ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৭ জুন রোস্তভে। গ্রুপের অন্য দুটি দল কোস্টারিকা ও সার্বিয়া।

গ্রানিয়া কোমারি ট্রেনিং ক্যাম্পে শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা তো চলছে ফুটবলারদের। প্রথম সত্যিকারের ট্রেনিং সেশন হবে আজ। এখানে মোট ছয় সেশন অনুশীলন করবে ব্রাজিল। এরপর চলে যাবে লন্ডনে। বিশ্বকাপের আগে তিতের দলের শেষ প্রস্তুতি হবে সেখানে। ব্রাজিলের অনুশীলনে লেফট ব্যাক মার্সেলো, মিডফিল্ডার কাসেমিরো ও ফরোয়ার্ড রবের্তো ফিরমিনো এখনো যোগ দেননি। ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের জন্য। ২৬ মে কিয়েভে সেই ফাইনালের পর সোমবার লন্ডনে ব্রাজিল দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তাঁরা।

তবে দৃষ্টিটা থাকবে সেই নেইমারের ওপরই। যতই তাঁর ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করুক ব্রাজিল, সেলেসাওদের বিশ্বকাপ দলের নাটাই যে এই ফরোয়ার্ডের ওপর, তা নিয়ে সংশয় নেই কোনো।
সূত্র : ডেইলি মেইল

 

Comments

comments

%d bloggers like this: